নদীর নাম কথামানবী। জানতে চাইতে পারেন কোথায় সে নদী? আপনি তাহলে জেনে রাখুন, নদীর
কথা বলতে আসিনি,বলতে এসেছি কিছু নোংরা বাস্তবতার কথা।
এসেছি চোখ আঙ্গুল দিয়ে জোর করে চোখের জল ফেলাতে নয়, সমাজের চোখকে আঙ্গুল দিয়ে অন্ধ করে দিতে। কি লাভ এ
দৃষ্টিকটু সমাজকে দৃষ্টি শক্তির অধিকারী রেখে?
একটা নদী আছে। তার বুকে জল আছে।
আছে বিষাক্ত জল,পরিষ্কার
জল। যাকে পানি বলি আমরা।
পানি খাই,
পানি দিয়ে লাই(গোসল
করি)। এখানে আছে ভদ্র
সমাজ,আছে কালো অন্ধকার। আছে সামাজিকতা, আছে দায় এড়ানোর
মানসিকতা।
আছে চোখ বন্ধ
করে চলা কারও কারও জীবন।
অাছিয়া বেগম।
স্বামী বেচে নেই।
দ্বারে দ্বারে ভীক্ষা করা তার
পেশা। কানে কম শোনে।
কারও বাড়ী খাবার সময়
হলে বেহায়ার মত বসে পড়ে।
-সবুজের
মা তোরা কি দিয়ে নাদিছিস
(রান্না করেছিস)।
-এই তো শাক ভাতে আর
রাতের মাছ
নাদা,খাবে নাকি বসো।
এমনি ভাবে যখন
যেভাবে পারে কারও
বাড়ীতে উদরপূর্তি করে।
নাজিম,
লোকে তাকে ডাকে ডুমা (খারাপ
লোকদের নাম) বলে।
ভবঘুরে।
গাজা না হলে চলে না।
কাজ-কাম করে না।
টাকা না থাকলে হাত
পাতে। কারও ঝাড়
থেকে বাশ চুরি করে।
বউকে পেটায়।
সালেহা খাতুন।
লোকে তাকে ডুমার বউ
বলে ডাকে।
কথামানবী'র তীরে তাদের
একটা ছাপড়া ঘর।
সময়ে সময়ে রং বদলায়।কখনও
পূর্নতা পায়নি সে ঝুপড়ী ঘর।
কখনও গাজার টাকা কম
পড়তেই ঘরের
বারান্দা স্থানচ্যুত হয়েছে।
সালেহা খাতুনের কাজ
বলতে বর্গা ছাগল
চরানো,ধান, গম কুড়ানো।
এই ভাবে দিন কাটত।
আমি সবুজ।এলাকার যুবক
ছেলে।রাস্তা-ঘাটে ফুফু
আছিয়া বেগম
কে দেখলে লজ্জা লাগে।
আমার ফুফু ভিক্ষা করে!
কখনও
কথা বলতে ইচ্ছা করে না।
আমার আব্বার আপন বোন।
আমার ফুফুর অনেক জমি ছিল।
সব গাজাখোর
ছেলে খেয়েছে। তাই এখন
নদীর ধারে থাকে।
নদীর কোন আপত্তি নেই
উদ্বাস্তুকে জায়গা দিতে।
-----------------------
এ সমাজে কেউ
নীতিকথা শোনায় না।
এখানে দুর্বলকে পিষে ফেলা হয়,পতিতাকে নিরাপত্তা দেয়া হয়।
বড্ড হাস্যকর এ সমাজ!
এখানে কেউ চরিত্রকীত্তন
করে না,এ সমাজ সুখ
চায়,ভোগ চায়,নারীদেহের
গন্ধ পেলে বমি করে। এ
সমাজের
গুণীজনেরা স্বজনপ্রীতি খুব
ভালো করে জানে।এ সমাজ
গরু দিয়ে ফসল নষ্ট করে আর
গেরস্তকে পাহারা দিতে বলে।
সালেহা বেগম ডুমার তৃতীয়
বউ। আগের
একটা মারা গেছে,অন্যটা আলাদা থাকে এক
ছেলেকে নিয়ে।
আগেই
বলেছি নীতিকথা শোনাতে নয়,এসেছি নোংরামির
কিছুটা জানান দিতে।
শারমিন।নামটা ভালোই
তাইনা?
ডুমার মেয়ে।সারাদিন
ঘুরে বেড়ানো।এর-ওর
গাছের আম-জাম,পেপে,
সুপারি চুরি করা তার
পেশা। কারও চড়,লাথি তার
নিত্য পাওনা।
বেশ্যা,মাগী,লটি এসব
শুনে সে অভ্যস্ত।
মুখে কোনকিছু আটকায়
না এতটুকু মেয়ের!
নিষিদ্ধ কথাগুলিও তার
অজানা নয়।
সে এ সমাজের আর
দশটা আদরের দুলালী মত নয়।
তার
বাবা তাকে খুকী বলেনা।
রাগলে শালী বলে,বলে মাগী।
জন্মদাতা!
কথামানবী'র তীর আজকাল
গভীর রাতে শুধু
জোছনা দেখেনা,তাকে এখন
নারী-পুরুষের অবৈধ উহ-আহ
আওয়াজও তাকে শুনতে হয়।
বেহায়া বেশ্যার খদ্দের
পাওয়ার
নোংরা খিটখিটে হাসিও
তাকে শুনতে হয়।
আমরা ভদ্রসমাজ তাদের
ঘৃনা করি দিনের আলোতে,
রাতের বেলা আমরা আমরাই
তো!
যৌনতা, যৌন সঙ্গ সবাই চায়।
উত্তেজনা শেষ হওয়ার আগ
পর্যন্ত!
চাহিদা মিটে গেলে,
শালী তুই বেশ্যা!
আধুনিক সমাজে বেশ্যাদের
ও স্বামী থাকে,ডুমাদের মত
স্বামী!
যে সমাজে ভদ্রকে হিজড়া বলা হয়,আর
ধর্ষনকারী সুপুরুষ,
সেখানে কিছুই আর বলার
থাকে না।
ডুমার
গাজা খাওয়া,সালেহা বেগমের
দেহব্যবসা, আছিয়া বেগমের
ভীক্ষা করে ছেলেকে নোংরামির
চূর্ড়ান্ত
পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া বেশ
ভালই তো চলছিল......
নিত্য নতুন বিছানা সঙ্গী,
সুখের সঙ্গম।
হাতে কাচা টাকার গন্ধ।
স্বামীর নির্বিকারত্ব
ভালোই তো চলছে....
গাজার ঘোর বুঝি কাটলো..
-----------------------
সারাদিন
হাজারো লোকের
আনাগোনা,গাজার
আসর,গৃহবধূর
গৃহঅভ্যন্তরে দেহদান কেমন
একঘেয়ে লাগে তাই
না পাঠক?
জীবনটা বড্ড
একঘেয়ে পতিতাদের,অন্ধকা
র গলির মানুষদেরও একসময় আর
বিছানায় সুখসঙ্গমে দেহ
সাড়া দেয় তো মন
সাড়া দেয় না।
কিছুটা ভিন্নতা চায়...
একটু সংসারী হতে মন চায়।
কিন্তু এ
জীবনে যে ভিন্নতা আনতে চাইতে নেই.....
সমাজ তোমায়
ছুড়ে দেবে আস্তাকুড়ে সে কথা কি তুমি জানো না সালেহা বেগম?
যা কিছু শুধু তোমার একজন
ভাগীদার,তা জনে জনে বিলিয়ে দিলে!
তুমি কি জানো না,
সালেহা বেগম সমাজ,কোন
স্বামী কোন
পতিতাকে আশ্রয় দেয়না।
তুমি একটা বেশ্যা মাগী।
রবীন্দ্রনাথ তোমায়
বারবণিতা বলে,আমি তোমায়
বেশ্যা বলি।
তুমি পুরুষের লালসার
জলে ভিজিয়ে নিয়েছ
তোমার ভেতর-বাহির।
তুমি কি জানো না,
জীবনে তোমার মূল্য কিসে?
কথামানবী'র তীরে আজ
গ্রাম্য সালিশ।
গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত।
জনতা কেউ শিস
বাজায়,কেউ
গালি দেয়,কেউবা কৌতুহলী দর্শক।
সালেহা বেগম,ডুমা,আর তার
বিছানাসঙ্গী দাড়িয়ে মাঠের
মাঝখানে। সব
কথা শোনা হল।উপস্থিত
জনতা রগরগে কাহিনীর
মজা নিচ্ছে।
অস্পষ্ট সব জনতার কন্ঠস্বর......
-ইস! শালী মাল একটা.....
-আমারেও যদি একটু দিত......
-সুখ পাইছে.......
-মাগীর **মত যদি.......
-শালীর চুলকেটে দে......
একেক জন একেক কথা বলে।
----------------------------
সিনেমার আইটেম
গানে আমরা মজা লুটি।
শিলার জাওয়ানী,মুন্নির
বদনাম কি সব খিস্তি!
কিন্তু কেউ কি চায় আমার
বউ,বোন মেয়ে, মা,এমন কিছু
করুক?
অকর্মা ডুমা কিন্তু
সেটা করেছে?
জগত বদলে গেছে না?
আজকাল সানি লিওনের ও
স্বামী থাকে!
যে সমাজের পুরুষ
নারীকে বেশ্যা বানায়,সেখানে নারী বলতে গেলে হাতের
পুতুল।
আপনি যেভাবে নাচাবেন....
গ্রাম্য সালিশ
সালেহা বেগমকে শুদ্ধ
করে তুলতে পারেনি।
যার স্বামীর চাই
টাকা,দেহদান
সেখানে মামুলি কাজ।
এখানে সর্বত্র নিষিদ্ধ
কথার,কাজের আনন্দ।
যেখানে সমাজের
অনুগামীদের সুযোগ্য পুত্রগন
বেশ্যাপল্লীর বাসিন্দা......
আজ দুবছর সালেহা বেগম
ঢাকার বাসিন্দা।
একটি গার্মেন্টস তার
কাজের ক্ষেত্র।
অফুরন্ত স্বাধীনতা তার।
তার পুরনো খদ্দেরদের
সহজে আগমন।
সালেহা বেগম সুখেই
আছে বহুগামিতার
পথে চলে।
ডুমার
অকর্মা জীবন,শারীরিক
নির্যাতন, টাকার জন্য মারধর
থেকে সে মুক্ত।
দেহসুখ
তাকে কতদুরে নিয়ে যায়....
আজ দুমাস সালেহার
মা মারা গেছে।
ছেলেরা খেতে দেয়না,
তাই মেয়ে সালেহার
বাসায় উঠেছে সালেহার
বাবা।
নাতনী শারমিনের
সাথে মাঝেমধ্যে ঝগড়া হয়।
নিষিদ্ধ কথার
ফোয়ারা নামে।
তার মায়ের
টাকা বসে বসে খায় বুড়া।
সে সহ্য করতে পারেনা।
এই নিয়েই ঝগড়া হয়।
সেদিন দুপুরে অফিস
থেকে ফিরলো সালেহা বেগম।
মেয়ে,বাবার
সাথে খেয়ে আবার গেল
অফিসে।
কিছুক্ষনের মধ্যে প্রচন্ড বৃষ্টি।
মতলব মিয়া ঘরে ঢুকলো।
চৌকিতে নাতনী শারমিন
শুয়ে।
মতলব মিয়া ঘুমন্ত শারমিনের
দিকে এগিয়ে গেল।
ছোট্ট
বাচ্চা মেয়েটাকে বাধতে চাইলো নিষিদ্ধ
যৌনকামনার লালসায়।
দুইদিন পর....
রাত ১২টা ২০ মিনিট।
সবুজের
ফোনে একটি আননোন
নাম্বার থেকে ফোন
আসলো।
শারমিন গলায় ফাস
লাগিয়ে আত্নহত্যা করেছে।
এলাকার মানুষের দুদিনের
আলোচনার একটি নতুন বিষয়
পাওয়া গেল।
তিনদিন
লাশকাটা ঘরে অবস্থান।
তারপরে গলিত,দুর্গন্ধময়
লাশের কবর দেশে শয়ন।
একটি দুর্গন্ধময় জীবনের
শেষরেখা টানা হল....
প্রিয় পাঠক,
এমন নিচু, চরিত্রদোষেদুষ্ট
মানুষের জন্য
মায়া জন্মে না।
না একটু সহানুভূতি।
তবু মানুষ নিঃস্পাপ হয়েই
জন্ম নেয়।
একটি শিশুর সামাজিক
পরিবেশই তার ভবিষ্যৎ ধারন
করে।
সালেহা বেগমকে দেখতে মন
চায়না।
দুচোখের বিষ আছিয়া বেগম।
সমস্ত পরিণতির নেপথ্য
নায়িকা কি তিনি নন?
যে ছেলে মা কে শালী বলে,
সে কেমন ছেলে?
তবু প্রশয় দিয়েছেনন
আছিয়া বেগম।
মা বলে!?
নিষিদ্ধ পল্লীর নিষিদ্ধ
মানুষদের ভালবাসা যায়
না। কামনার শিকার
বানানো যায়।
শারমিনের জন্য মায়া হয়।
পাঠক একবার ভাবুন তো,
শারমিনের জন্ম
যদি একটা ভাল ঘরে হত,পেত
একটি সুন্দর সমাজ,একজন ভাল
পিতা?!
★যে পিতা মেয়েকে শালি বলে না,
নাকের নোলক
বিক্রি করে গাজায় বুদ হয়
না।
পৃথিবীতে পিতা আছে।
ভাল মন্দ দুটোই।
পৃথিবীর সবকিছুতে কিন্তু
আছে,আছে শর্ত প্রযোজ্য।
শারমিনদের জন্য সুন্দর
একটি সমাজ দরকার,দরকার
একজন পিতার।
★আমার লেখা দ্বিতীয় গল্প।
একটি সত্য ঘটনার
ছায়া অবলম্বনে। সমাজের
নিচুস্তরের
কথা বলতে চেয়েছি। তাই
বাধ্য হয়ে কিছু নীচ মানের
শব্দ আমাকে চয়ন
করতে হয়েছে।