Sunday 22 November 2015

নীল বন্ধু

এই চাঁদের হাটে কলঙ্ক রটে যাবে সেইদিন! প্রেমপূজারী কেউ যখন বিদেয় হবে অন্য কোথাও,অন্যকোন গল্পে।সারাটি জীবন আমাকে একাকীত্ব থেকে দুরে ঠেলে রাখা মেয়েটা সেদিন একলা হবে।এমনি রাত দূর করা চাঁদের হাটে সেদিন ক্রেতা-বিক্রেতায় ভরে উঠবে শোকের উঠোন।নিরব কোলাহলে চুপটি একা থাকা হবে কি কারো?
উঠোনজুড়ে বসবে আসর,
কাঁদবে বধূ ভাঙবে বাসর
আর সেই আমি জীবন্ত সজীবতা প্রয়ানে পঁচবো বৈকি! তবুও এই জোছনার দোহাই দিয়ে রাত কাটিয়ে দেয়া যাবে। হাজার-সহস্র রাতের গল্পকথা একনিমিষে উড়াল দেবে অন্যকোন বন্দরে...
নীল বন্ধু এই চাঁদে প্রেম নেই! সত্যি বলছি বিশ্বাস করো কেমন যেন সম্মোহন সম্মোহন লাগে আমার! এ যেন মরণ নেশা! আর কোন একদিন একলা হবার গল্প কোন এক নববধূ'র...

Sunday 11 October 2015

প্রণয়িনী

কে লিখে সেই ডায়েরী সেখানে আকন্ঠ নিমজ্জিত শূণ্যতা! সপ্তডিঙা পার হয়ে এখানে কেউ বৃষ্টি ভেজা ঝাপসা বিকেলের সুযোগ খোঁজে না। শূন্যতাকে পুজি করে শূন্যতা বিলি করে একলা থাকার মতন অভিপ্রায় আর কোথায়...
জোয়ারের টানে তলিয়ে বিলিয়ে না দিয়েও আমি-তুমি অন্যরকম অস্পৃশ্য সেও কি কম থেকে সহস্রকর প্রণয়িনী?  ওলট-পালট করে দেয়া এইসব সভ্যতার ভব্যতায় সে অথবা অন্যকেউ না হয় আড়ালেই বাসে! ;-) কি হয় তোমার? যা কিছু সব বিলীন হয় অথবা কুলীন সেই সব বিকেল আর রাত্রিচরী উপাখ্যান!
আলো-ছায়ার ক্ষিপ্রতাসম্পন্ন যে আলোকচ্ছটা তাহার যে কারুকার্য কোথা হতে তার উৎপত্তি অথবা অন্ধকারের আধেক তাহা সকলের গোচর না হওয়াই সমীচিন :-)
fb/itssm96

Saturday 3 October 2015

"আয়না কথন"

রাত গভীর হলে যখন খোলা জানালায় নিথর-নিস্তব্ধ ঝিঝি পোকা ঘুমিয়ে যায়,আমি তখন পথে নামি।

চারদিক নিস্তব্ধ,রাস্তার কুকুরগুলি ও তাদের নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততা ভুলে যায়,কারও কারও সাদা-কালো দিনগুলি রাতে রঙীন হয়ে উঠে।মাঝ রাস্তায় আসতেই মাঝে মাঝে উচুতলার বাড়ীগুলো থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসে।তেমনি এক হাসির মুহূর্তে কোন এক বাড়ীর সম্মুখে থেমে গিয়েছিলাম আমি! বলেছিলাম ভূত! ভূত! আরও খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিল সে!
তারপর আচমকা আলোর ঝলকানিতে সে থেমে গেল অপ্রস্তুতের মত।আমি নিঃশব্দে বলেছিলাম, শ্রাবণী!  বুকের বসন হারালো কোথায়! সলজ্জ মুখটি ঢাকলে অন্ধকারে! তারপর কত রাত আমি হেটেছি,পায়চারী করেছি,ছুটেছি নিথর পায়ে এদিক-সেদিক! রাস্তার কুকুরগুলির সাথে পরিচয় পর্ব সেরেছি,ওরা এখন আর আমাকে দেখে বিরক্ত হয়না।আমি রাত্রীর যাত্রী দীর্ঘ অমানিশা দুপায়ে মাড়িয়ে হাতড়ে ফিরেছি সেই নির্মল হাসির উৎস।আর বলেছি মনে মনে,কেন এ ক্ষণিক প্রলয়! নিস্তব্ধ নিরব রাতে যখন কারও আকাঙ্খিত রিংটোন বেজে ওঠে,তখন আমি জানালার কাছে গিয়ে দাড়াই;গৃহ অভ্যন্তরে হয়ত কোন এক শ্রাবণী তখন ঘুমদেশে রাতের তাঁরা  গুনে,ছড়া কেটে ঘুম পাড়ায় তার রাজকুমারকে! আমি আবার ফিরে আসি।নিজের ডেরায় ফিরে ক্লান্ত হতে ভুলে যাই,দেয়ালে টাঙানো একটুকরো আয়নার বায়নায় নিজেকে রঙ্গমঞ্চের শিল্পী মনে হয়।হাসছি-কাঁদছি,ছুটে চলেছি,গেয়ে চলেছি, ভেতর থেকে কলকাঠি নাড়ছে নাট্যকার।
আমি শুধাই,  এই নটী-নাট্য কার? আয়নার সাথে ফিসফিস করে কথা বলি।আমার আবেগ-অনুভূতিগুলো বোঝে ও,কত সুন্দর করে অনুবাদ করে।
আমি অবাক হই,আমার চোখে চোখ রেখে ও কথা বলে!

পাদটীকাঃ কোন এক শ্রাবণে যখন ভিজে ভিজে গায়ে কাঁদা মাখিয়ে ঘোর অন্ধকারে কেউ ঘরে না ফিরে ছুটে চলতে চায়,কোন এক শ্রাবণী এসে তাদের থামিয়ে দেয়! তারপর নিরুদ্দেশ...শ্রাবণীরা নিজে অঝোর ধারায় ঝরে ঝরে কাউকে থামিয়ে দেয় সবার অজান্তে...

Sunday 13 September 2015

বালিকা

বালিকা
একটু বাসতে পারো ভালো?
রুপকথার রুপ চাই না।
দিয়ো হৃদয় ভরে আলো।
বালিকা
একটু আসতে পারো কাছে?
দুঃসময় পালিয়ে বেড়ায়,
থাকলে তুমি পাশে।
বালিকা
কেমন আছো তুমি?
কপাল আমার উষ্ণ হোক,
দাও না একটু চুমি।
বালিকা
বাসতে পারো ভালো?
তোমার হৃদয়ভরা আলো
ঢাকলো কেন শত রঙের
কালোয়।
বালিকা
আসতে পারো আলোয়?
আমার থাকতে সময় ভালোয়।
বালিকা
টানতে পারো বুকে?
শত সুখে দুঃখে,
শুধুই তোমার আমি।
বালিকা
হতে পারো ভীত হরিণী?
সম্মুখে তোমার বিষধর সাপ,
ভয় নেই,এইতো তোমার আমি।
বালিকা
চলো একটু ভালোবাসায় হই
মত্ত।
দেখো হৃদয়ে মোর
জমা আছে কথা কত্ত।
বালিকা
চলো একটু দেখি জোছনা।
টানবো কাছে,থাকুক দুরে।
না,আমি বেহুশ না।
বালিকা
চলো একটু কথা বলি ফুটাই
প্রেমকলি।
সেই
সুবাসে ভাসবে তুমি,হাসবো
সুখে আমি।
বালিকা
চলো একটু বাতাস
ধরি,মুঠোবন্দী করি।
একটু দুষ্টুমি খেলুক তোমার
মনে।

www.facebook.com/itssm96

Saturday 12 September 2015

যে জীবন অন্য কারো!

facebook শব্দের পিঠে শব্দ সাজিয়ে লেখা হয় কবিতা,গদ্য,গল্প,উপন্যাস।লেখার প্রতিটি পরতে পরতে ফুটে ওঠে জীবনের না দেখা ক্যানভাস! অস্থির অসহ্য জীবনবোধ একসময় স্থির হয়...
হাতে হাত ধরে ছুটে চলা বহু আকাঙ্খিত দুরন্তপনায় একসময় ছেদ পড়ে।বিচ্ছেদ আর ভালবাসার অর্থপূর্ণ কথকতা একসময় নিরর্থক মনে হয়।এ যেন অন্যজীবন, অন্য কারো হাতে গড়া,অন্য কারো জন্য যেচে মরা! কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে তখন আর কোন অভিযোগ বাকি থাকেনা,শুধু নিঃস্পৃহ অভিপ্রায় সব উঠোনের এদিক-সেদিক পায়চারি করে মরে...

Wednesday 26 August 2015

তোমার তুমি, আমার তুমি অথবা তুমি তাহার!!!



আমার আবির্ভাবে তোমার বিবর্তন
খোলা রেখ দুচোখ তোমার, খোলা রেখ মন!
একটু হাসি,একটু জড়তা , একটুখানি ভয়।
আকাশ-বাতাস খোলা রাখতে কে বলেছে হায়!
দেখেছি আমি, বুঝেছি  এ কাব্য হবার নয়,
এ হল পাপ মিশ্রিত ভালবাসা! লজ্জা হারানোর সংশয় (আমার আপত্তি আছে রমণী)
ভেজা শাড়ীর আঁচল, লেপটেছে চোখের কাজল!
আকাশ-বাতাস বন্ধ তোমার, বন্ধ ছিল কি  মন?
এতই যদি তোমাতে তুমি,কিভাবে গেলে পিপাসিত হরিণীর মত ওষ্ঠ-অধর চুমি!
তোমার তুমি, আমার তুমি অথবা তুমি তাহার ,
সত্যি যাহা চক্ষু অগোচর , বলে হলেম চামার(খারাপ মানুষ)

২৭-০৮-২০১৫

Saturday 22 August 2015

ছেলেটি

তপ্ত মরুর বুকে এক 
টুকরো বরফ খন্ড 
পড়লে নিমেষেই যেমন 
তার অস্তিত্ব বিলীন 
হয়ে যায়,তেমনি ভাবনা সব 
তার মনজুড়ে। মুখের 
দিকে তাকালে মনে হবে,চারদিক 
বিস্তীর্ণ 
মরুভূমি মাঝখানে চোরাবালিতে সে একা সাঁতরাচ্ছে । 
আজকাল সাথীর 
একটা কাজ 
বেড়ে গেছে। 
বাড়তি কাজ 
হিসেবে যুক্ত 
হয়েছে ছেলেটিকে লক্ষ্য 
করা। প্রতিদিন 
বিকেলে তাকে ছাদে পায়চারি করতে দেখা যায়। 
মাঝে মাঝে হাতে একটা ডায়েরী আর 
একটা কলম। 
কি জানি লিখে আর 
ছুড়ে ফেলে। যেন 
ছুড়ে ফেলতে চায় 
চূড়ান্ত 
বিরক্তি আর চরম 
অসহায়ত্ব। 
ছেলেটির উপর কেমন যেন 
একটা আকর্ষণ 
জমে উঠেছে সানজিদার 
মনের কোণে।যদিও 
ব্যাপারটা সে সবসময় 
তার 
অতি কৌতুহল হিসেবেই 
দেখতে চেষ্টা করে। 
সাথী, এই 
সাথী এইদিকে একটু আয় 
তো মা। 
সাথীর পুরো নাম 
সানজিদা সুলতানা সাথী। 
মা-বাবা আর ওর সব 
বন্ধুদের 
কাছে ও সাথী নামেই 
পরিচিত। 
মা রান্নাঘর 
থেকে ডাকছে। 
-মা কি হয়েছে? ডাকছ 
কেন? 
ও মা! তুমি এখনও আব্বুর 
দুপুরের 
খাবার তৈরি করোনি? 
-এই তো হল বলে।তুই একটু 
হেল্প কর 
তো মা।তোর বাবার 
তো দুপুরে পেটপুরে না খেলে লেখালেখি জমে উঠে না। 
-মা তুমি পস্তাবা। 
-কেন বল দেখি! 
-আমার আব্বুর মত একজন 
বিখ্যাত 
লেখককে তুমি দেরি করে রান্না করে খাওয়াচ্ছ। 
কি? ঠিক হচ্ছে! বলো। 
-তো তুই আর তোর 
বাবা মিলে কি করবি শুনি? 

শুনবে? সত্যি বলছো! 
তাহলে শোন, আমার 
আব্বুকে আমার 
মেয়ের 
সাথে বিয়ে দিয়ে,তোমাকে মাঠের 
বাইরে পাঠিয়ে দেব। 
সাথী বলেই দিল ছুট........ 
মা আর মেয়ের 
প্রতিদিনই 
এমন মধুর ছোট ছোট 
খুনসুটি চলে। 
সাথীর 
সবচেয়ে ভালএবং সবচেয়ে কাছের 
বন্ধু ওর বাবা আসিফ 
চৌধুরী। 
দৈনিক 
সহযাত্রী পত্রিকার 
সাহিত্য সম্পাদক 
এবং দেশের 
নামকরা লেখক। 
ভার্সিটিতে কে কি করলো, 
কোন বান্ধবী কোন 
পোশাক 
পরলো,স্যার কি বললেন 
সব 
বাবার 
কাছে না বলা পর্যন্ত 
সাথীর পেটের ভাত হজম 
হবেনা। 
সাজেদা 
বেগম বাবা-মেয়ের এমন 
কান্ড দেখে প্রায়ই 
বলেন - 
তোরা বাপ- 
বেটি পারিস 
বটে। 
ওমনি মেয়ের অভিমান 
-আব্বু 
দেখেছো মা কি বলে? 
-আরে মা থাম,তোর 
মায়ের 
হিংসে হচ্ছে বুঝলি? 
-বাহ, বাবা- 
মেয়েতে আমাকে একঘরে করা হচ্ছে বুঝি? 
-------------------------- 
আব্বু আজ দ্রুত অফিস 
থেকে বাসায় ফিরলো। 
আমারও ভার্সিটি বন্ধ। 
আজ 
আব্বুর সাথে অনেক 
গল্প 
করা যাবে। 
----------------------- 
ছেলেটির নাম তািরক 
মাহমুদ। বাবার 
অফিসে চাকুরী করে। 
দেখতে, 
শুনতে মোটামুটি। 
কেমন যেন 
রাগি রাগি চেহারা। 
ছবিতে স্পষ্ট 
বোঝা যায় 
রাগে কপাল 
কুচকিয়ে রয়েছে! 
-আব্বু 
দেখেছো ছেলেটা কেমন 
রাগি রাগি চেহারা করে তাকিয়ে আছে। 
মনে হচ্ছে আমাকে হাতের 
কাছে পেলে আমাকেও 
পিটানি দিয়ে ভর্তা বানিয়ে ফেলবে। 
-কই দেখি, দেখি! 
আরে না ছেলেটা কিন্তু 
খুব 
নম্র, ভদ্র, আর কি স্থির 
তুই 
দেখলে বুঝবি। 
হ্যা,রে মা, 
ছেলেটাকে পছন্দ হয়? 
আমার 
মায়ের যোগ্য 
হবে কি না বল? 
-যাও তোমার 
সাথে কথা নেই। 
------------------ 
সাথীর আজ সেই 
ছেলেটির 
কথা মনে পড়ছে। 
সব কিছুতেই কেমন যেন 
ব্যতিক্রমী সে। তার 
চলাফেরা,কথা বলা, হঠাৎ 
করে একটু শুকনো হাসির 
আগমন। কেমন যেন 
বিরক্তিকর 
অথচ আকর্ষনীয়,কেমন 
যেন হৃদয় 
নাড়িয়ে যাওয়া কারও 
প্রতিধ্বনি সে শুনতে পাচ্ছে আজ 
ছেলেটির সেই সব 
স্মৃতিরোমন্থন করে। 
হঠাৎ আজ 
কেন 
ছেলেটিকে মনে পড়ছে? 
তাকে তো ভালো করে দেখাই 
হয়নি। সমুদ্রের তীর 
থেকে দুরের আকাশ 
দেখার 
মত সে দেখা। সবকিছু 
কেমন যেন 
ঝাপসা আর অস্পষ্ট। 
কেমন যেন 
দুকূল 
ছাপিয়ে যাওয়া সাময়িক 
বেদনার নীল ঢেউয়ের 
আচড়! 
---------------------------- 
আজ সাথীর বিয়ে। 
বাবার পছন্দকে কোনদিন 
অপছন্দ 
করেনি সে। 
বাবাকে তাই কষ্ট 
দিতে মন 
চায়নি। 
ওর স্বামীর 
পরিবারে লোক 
বলতে বড় ভাই-ভাবী আর 
একটা মিষ্টি বেবী। 
প্রথমদিনেই তার 
সাথে সাথীর ভাব 
জমে উঠেছে। 
কি মিষ্টি নাম! শিমু। 
এ বাড়িতে এসেই 
বাবার 
কথা মনে পড়ে গেলো। 
বাবা বিয়ের 
আগে প্রায়ই 
বলতো, 
-মা তুই ভীষন সুখী হবি। 
তোর আর 
আমার কথা মনেই হবেনা। 
তুই 
তোর বাপের 
বাড়ী আসার সময়ই তখন 
পাবি না। 
সত্যি বাড়ী টা অনেক 
গোছানো,সুন্দর, 
পরিপাটি করে সাজানো। 
যেন এক 
মায়াবী স্বর্গলোক! 
কিন্তু 
সে কি সুখী হতে পারবে? 
তার বরের 
যে রাগী মার্কা মুখ। 
সবসময় 
মুখটা কালো মেঘের মত 
অন্ধকার করে রাখে। 
অনেক কেঁদেছে আজ 
সাথী। 
চোখ ফুলে গেছে। 
চোখের 
কোনে আঠালো জলের 
সারাংশ জমে আছে। 
সারাটি পথ চোখে জলের 
ফোয়ারা নেমেছে। 
শিমু বার বার আচল 
ধরে টেনেছে। 
-আন্টি, আন্টি, 
তুমি কাঁদো কেন? 
তুমি না বড় 
হয়েছ! বাচ্চা মেয়ের 
মত 
কাঁদে না। 
আমি কিন্তু 
আম্মুকে বলে দিব, 
জানো আমি কান্না করলে আম্মু 
বকা দেয়। 
মা- 
বাবাকে ছেড়ে আসতে মন 
চায়নি। 
হঠাৎ করেই তাদের 
বিয়েটা হলো। 
ওর বরকে তেমন 
ভালো করে দেখতেই 
পায়নি। 
শুধু 
ছবিতে দেখেছে। 
বাবার 
পছন্দকে এড়িয়ে যেতে পারেনি। 
কারো সাথে কোন 
সম্পর্কে জড়ায়নি। 
তাই 
বিয়েতে রাজি হয়েছে। 
বাবা তাকে অনেক 
ভালবাসে। 
সে ভালবাসাই 
সাথীকে সাহস 
যুগিয়েছে তারিক 
নামের 
একটি অচেনা ছেলের 
সাথে পথ চলতে। 
শুধু একদিন 
ফোনে কথা হয়েছে তারিকের 
সাথে। 
আব্বু বলেছিল,ওর 
সাথে একবার দেখা কর। 
আমি তারিককে বলে দিই 
ফোন করে। 
সাথী না করেছে। 
-আব্বু তুমি তোমার 
জামাই 
কে তো দেখেছো। 
তুমি নিঃশ্চয় তোমার 
মেয়েকে কখনো অসুখী দেখতে চাইবে না। 
তোমার প্রতি আমার 
বিশ্বাস আছে। 
কেমন আছেন, কি করছেন 
টাইপের কথা- 
বার্তা হয়েছিল 
তারিকের 
সাথে। 
মানুষটাকে ভালো করে চিনে উঠতেই 
পারলো না। 
কি আছে যে কপালো তোর 
(নিজেই নিজেকে বার 
বার 
মনে মনে জিজ্ঞেস 
করছিল)সাথী? 
বর ব্যাটার এখনও 
দেখা নেই। 

আমি কি একা একা বসে থাকবো নাকি?! 
এই ঘোমটা টেনে আর 
কতক্ষণ? 
উফ! 
সেই মালা বদলে একটু 
দেখেছে তারিককে আর 
সেই ছবিতে। 
রাত ১১:২০ বাজে। 
এতক্ষনে তারিক বাসর 
ঘরে ঢুকলো। 
ঘরের 
ডানদিকে একটি কক্ষ 
আছে। 
তারিক সেখানেই 
ডুকলো। 
কিছুক্ষণ পর বের 
হয়ে আসলো। 
সাথী একটু মুখ 
তুলে চাইলো.... 
এত্তক্ষন সাথী একাই 
বসে আছে। 
ভাবী সবাইকে নিয়ে বাইরে গেছে একটু 
আগে।মিষ্টি শিমুও ওর 
মায়ের 
সাথে চলে গেছে। 
-গুড নাইট আন্টি। 
মিষ্টি একটা মেয়ে তার 
শয্যায় বসে তার 
আগমনী অপেক্ষায়। আজ 
থেকে তার বিছানা, 
বালিশ,টিভির রিমোট 
সবকিছুর অর্ধেক 
ভাগীদার 
উপস্থিত। তার ভাল-মন্দ, 
চলাফেরা, আনন্দে- 
শঙ্কায় 
সবকিছুতে সে থাকবে। 
তার স্বপ্নের 
মানে খুজবে। 
তাকে বুঝবে এই 
মেয়েটি! 
তারিক 
মেয়েটিকে চিনে! 
সেই প্রথম সময়ে যখন 
শহরে এসেছিলো। 
আজ থেকে তারিক 
ইচ্ছে করলেই একটু 
অগোছালো হতে পারে! 
ক্ষতি কি? বৌয়ের 
মিষ্টি অভিযোগ 
নিঃশ্চয়ই 
শুনতে মন্দ হবে না। 
নিঃশ্চয় 
চোখে পাকিয়ে কেউ 
তাকে শাসন 
করতে গিয়ে ফিক 
করে হেসে দিবে। 
রাত 
জেগে লিখতে বসলে এখন 
কেউ একজন 
তাকে নিঃশ্চয়ই 
বলবে 
-এই তোমার জন্য 
চা করে আনি! 
অফিস যাবার পথে কেউ 
একজন তার 
দিকে আড়চোখে চাইবে, 
শাড়ীর আচল 
মোচড়াবে, 
ওই কপলে একটু 
মিষ্টি ঠোটের 
স্পর্শ পেতে। 
ভাবীর ডাকে সংবিৎ 
ফিরলো তারিকের। 
-এই যে লেখক 
সাহেব,আপনার 
কবিতা পর্ব বন্ধ 
করে এবার একটু ঘুমান। - 
জ্বি ভাবী, আপনার 
কথা শিরোধার্য। 
একটু 
হাসি ফুটলো তারিকের 
মুখে। 
- কি ভাবেন মশাই, একটু 
শুনি, 
বলেন। তারিককের 
বিড়বিড় 
করা দেখে মনে মনে বলছিল 
সাথী। 
-ভালো আছেন আপনি? 
তারিকের প্রথম কথা। 
-আরে বলে কি! এমন 
রোমান্সেরর 
রাতে কেউ 
এমন প্রশ্ন করে? 
না জানি বলবে...... 
-মাথা নাড়ছিল সাথী। 
-আপনি নিঃশ্চয় অনেক 
ক্লান্ত। 
জার্নি করে এসেছেন। 
ঘুম 
পাচ্ছে খুব? 
-(লোকটা কি সব বলে) 
-তাহলে চলুন নামাজ 
আদায় 
করে তারপর ঘুমাবেন। 
সাথী ওযু করার জন্য 
নিরবে তারিকের পিছু 
পিছু 
উঠে গেল। 
তারিকের সাথে নামাজ 
পড়লো সাথী। 
আচমকাহঠাৎ 
করে সাথীর হাতটা খপ 
করে ধরে ফেলল তারিক। 
সাথী ভয়ে কেপে উঠেছে। 
-সুখী হোন। 
একটি অনুরোধ রইল 
কখনো যদি আমার উপর 
আপনার রাগ 
হয়,আপনি নিজেকে কষ্ট 
দিবেন না। কথা দিন। 
কোন উত্তর 
খুজে না পেয়ে সাথী শুধু 
ঠোট কামড়ে হ্যা সূচক 
মাথা নেড়েছে। 
দুজনে দুদিকে মুখ 
করে শুয়ে আছে। 
যেন নদীর দু প্রান্ত এক 
মোহনায় 
মিশে যাবার 
অপেক্ষায় 
অপেক্ষারত। শুধু 
জোয়ার 
আসতে যতক্ষন.... 
দুজনের মনে দু রকম 
ভাবনার 
দোলাচল 
আঁকিবুকি কাটছে। 
সাথী ভাবছে, আচ্ছা! 
লোকটা এমন 
কথা বলে কেন? 
কি জানি কি? লেখক 
মানুষের কথা। 
অতঃপর.... 
সকাল সকাল ঘুম 
ভাঙলো সাথীর। 
দেখলো বিছানায় 
মানুষটি নেই।অনেক 
আগেই 
উঠেছে সে। 
ভাবী এসে ডাক দিলো। 
-এই তো, তুমি ঘুম 
থেকে উঠেছো। 
চলো হাত- 
মুখ ধুয়ে খাবে। 
তারিক সকালে উঠেই 
বাগানে হাটাহাটি করে। 
পুকুর 
পাড়ে বসে দাঁত ব্রাশ 
করে। 
আগে মাঝে মাঝে ভাবত 
প্রতিদিন খুব 
সকালে ঘুম 
থেকে উঠে বাগানে পায়চারি করবে। 
তার সাথে থাকবে কেউ 
একজন! 
আজ ভাবতেই কেমন 
লজ্জায় 
পড়ে যাচ্ছে। 
তারিকের 
সবচেয়ে প্রিয় বই 
"মেমসাহেব"। 
সে নিজেও 
লেখালেখি করে, তবু 
নিমাই ভট্রাচার্যের 
এই 
বইটি তার অনেক প্রিয়। 
বইয়ের প্রথম পাতায় 
সে লিখে রেখেছে, 
"আমার জীবনে যদি কোন 
মেয়ে আসে,তবে তাকে বলবো তুমি আমার 
জীবনে মেমসাহেব 
হয়ে উঠো" 
সে মাঝে মাঝে "মেমসাহেব" 
থেকে কোর্ট 
করে মনে মনে বলে, 
আমি রজনীগন্ধা না হতে পারি,ক্যাকটাস 
তো। ক্যাকটাস দিয়েই 
কেউ 
সাজিয়ে তুলুক 
না তার 
জীবনধারা। 
সবার 
সাথে কি মিষ্টি ব্যবহার 
মেয়েটার। কোন 
অভিযোগ 
নেই। ভাবী যেন 
একটা মেয়ে পেয়েছে। 
তারিককে দেখলে কেমন 
যেন কুকড়ে যায় 
মেয়েটা। 
তবে কি তারিককে ভয় 
পায়? 
-------------------- 
তারিকের সেই 
রুমে কারো ঢোকার 
অনুমতি নেই, শুধু 
সে ছাড়া। 
সাথী অনেকবার 
খেয়াল 
করেছে তার স্বামী যখনই 
ঢোকে ওই রুমে, 
একা ঢোকে। 
বের হয় বিষন্ন 
মনে,কেমন যেন মৃত 
মানুষের মত চোখ-মুখ 
ফ্যাকাসে বর্ণ ধারন 
করে। 
তারিক অনেকবার 
খেয়াল 
করেছে- 
সাথী তাকে কেমন যেন 
ভয় 
ভয় চোখে দেখে। 
সেকি তাহলে ভয় পায় 
আমায়! 
-এই শোন তো। 
-জ্বি বলেন। 
এসে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকবে ভীত 
হরিণীর মত। 
সাথী বড় 
ভাবীকে জিজ্ঞেস 
করেছে। 
-আচ্ছা ভাবী, তোমার 
দেবর 
কি সবসময় এমন চুপচাপ 
থাকে,ঘোমড়ামুখী 
হয়ে? 
-ও 
তো ছোট্টবেলা থেকেই 
এমন।আমি এ 
বাড়ীতে এসে ওকে এমনি পেয়েছি। 
সারাক্ষণ 
ঘরে বসে বইয়ে মুখ 
গুজে পড়ে থাকে। 
যখন বলেছি খেতে আয়, 
তখন 
এসেছে। 
এত বড় হয়েছিল,তবু 
আমাকে ভাত 
মেখে দিতে হত, তবেই 
খেয়ে নিত। 
তবে ভীষন দুরন্ত ছিল।যত 
তিন 
যাচ্ছে পরিণত 
হয়ে উঠছে। - 
ভাবী ওই 
রুমটাতে তোমরা কেউই 
ঢুকো না কেন? 
-ওই রুমে ও 
কাউকে যেতে দেয়না। 
---------------------------- 
সকাল ৮টা বাজে। 
তারিক 
তড়িঘড়ি করে সবকিছু 
গুছিয়ে নিচ্ছে। 
সাথী সবকিছু 
গুছিয়ে দিচ্ছে। 
অফিসের 
সময় হয়ে আসছে। 
সামনে ঈদসংখ্যার 
যাবতীয় 
দায়িত্ব সম্পাদক 
সাহেব 
তাকে দিয়েছেন। 
সবকিছুই 
তাকে দেখতে হচ্ছে। 
---------------------------- 
সামনে ঈদ। সবার জন্য 
কেনাকাটা করতে হবে। 
তারিক 
ভাবীকে ডাকলো.... 
-ভাবী তুমি, শিমু, 
ভাইয়া,আর 
সাথী যার যেটা পছন্দ 
কিনবে। 
-সেকি! তুই 
যাবি না আমাদের 
সাথে? 
ও 
বেচারী কি ভাববে বলত? 
ও তো নতুন এসেছে এ 
বাড়ীতে,ওর মন খারাপ 
হবে না? 
-তুমি গেলেই হবে।আমার 
অফিস যাবার সময় 
হয়ে যাচ্ছে,আমি গেলাম। 
আজ ঈদ।নামাজ 
পড়ে এইমাত্র 
বাসায় আসলো তারিক, 
ওর 
বড় ভাই শিপন, 
সাথে ছোট্ট 
শিমু। 
ও 
বায়না ধরেছিল,আম্মু 
আম্মু 
তুমি বাবাকে বল 
আমাকে সাথে নিতে। 
-শিমু, 
মামণি তুমি বাসায় 
থাকো।তোমার জন্য 
অনেক 
খেলনা নিয়ে আসব। 
-যাও তোমার 
সাথে কথা নেই।তোমার 
সাথে আড়ি। 
তারিক এসে শিমু মণির 
মান 
ভাঙালো। 
-আম্মু চল আমি তোমায় 
নিয়ে যাচ্ছি। 
শিমু খুশিতে কাকুর 
গলা জড়িয়ে আদর 
কাড়লো। 
সাথীর মুখে ও 
হাসি ফুটে উঠলো,তারিকের 
হাসিমুখ দেখে। 
মানুষটি কেমন যেন 
অদ্ভুত! 
মুখে হাসি দেখাই 
যায়না। 
কিন্তু যখন একটু 
হাসে সাথী আনমনে চেয়ে থাকে। 
একদম বাচ্চাছেলের মত 
নির্মল 
সে হাসি। 
কেন 
যে লোকটা মুখটা গোমড়া করে রাখে সব 
সময়!(মনে মনে সাথীর 
অভিমাণী জিজ্ঞাসা) 
আজ ঈদের ২য় দিন। 
অনেকদিন পর বাবার 
বাসায় 
এসেছে সাথী। 
মনটা অনেক 
খুশি। 
সাথে ছোট্ট 
শিমুকে নিয়ে এসেছে। 
ওর বেস্ট ফেন্ড্রের 
দায়িত্বটা আজকাল 
শিমু 
পেয়েছে। 
দুজনের 
ছেলেমানুষী ভাবী উপভোগ 
করে। 
সাথীকে ডেকে রসিকতা করে বলে - 
তোর ফেন্ড্র ট্ 
তো ভালই! 
ভাবীকে শিমুকে সাথে নেবার 
কথা বলায় 
ভাবী বললেন..... 
-আমার 
কাছে অনুমতি নিতে হবে! 
পাগলী।ও তো তোর 
সাথে থাকতেই 
ভালবাসে। 
--------------------------- 
মেয়ে অনেকদিন পর 
বাড়ী এসেছে। 
সাজেদা বেগমের 
ব্যস্ততার 
শেষ নেই। 
কি কি রান্না হবে, 
মেয়েকে কেমন 
করে খাইয়ে দেবে,কত 
গল্প 
শোনার,কত গল্প বলার 
বাকী! 
ছোট্ট শিমু এরই 
মধ্যে সবার 
সাথে ভাব 
জমিয়ে ফেলেছে। 
সাজেদা বেগমকে নানু 
বলে ডাকছে। 
রান্না ঘরে ঢুকছে। 
সাথী রান্নাঘরে শিমুর 
পিছুপিছু আসলো। 
-মা, 
আমি তোমাকে সাহায্য 
করি? 
-না, আজ তোকে কিছুই 
করতে হবে না। 
আমি তোকে নিজ 
হাতে খাইয়ে দিব। 
আর হ্যা জামাইকে ফোন 
করেছিস? 
তোদের 
নামিয়ে দিয়েই 
চলে গেল ছেলেটা! 
ওকে ফোন করে বল,সকাল 
সকাল যেন চলে আসে। 
-আমি পারবো না। আজ 
তার 
অফিস না করলে কি হত! 
আমার ভয় করবে ফোন 
দিতে। 
কি নাকি কি বলবে। 
তুমি কথা বল। 
-ওমা! সেকি।ভয় 
করবে কেন? 
নিজের বরকে ভয় 
পেতে আছে বুঝি! 
-মা, তোমার জামাই 
সবসময় 
মুখটা কেমন 
গোমড়া করে থাকে। 
হাসে না।কেমন যেন 
মনমরা! 
সবসময় কেমন যেন আকাশ 
পানে চেয়ে থাকা অসহায় 
কোন বিহঙ্গ। 
-ভয় করলে চলবে মা বল? 
তোর 
স্বামী সে। 
তার সুখ-দুঃখের 
ভাগীদার তুমি। 
ওকে হাসি-খুশি রাখার 
দায়িত্বটাও এখন 
তোমার।ওর হয়তো কোন 
কষ্ট আছে। 
তাছাড়া তুই 
তো জানিস, ওর মা নেই। 
ভাই -ভাবীর কাছে বড় 
হয়েছে। 
------------------------ 
আজ সবাই একসাথে। 
তারিক,ওর ভাই, 
ভাবী,শিমু সবাই সাথীর 
বাড়ীতে এসেছে। 
সবাই গল্পে মশগুল। 
তারিক সব সময়ই নিরব 
শ্রোতা। 
সবাই তাকে এমনটিই 
জানে। 
------------------------- 
আজ 
তড়িঘড়ি করে অফিসে গেল 
সে। 
অফিস থেকে তারিক 
সাথীকে ফোন করেছে। 
আজ প্রথম সাথীর বর 
ওকে ফোন করলো। 
সাথী আনন্দিত 
না হয়ে চমকে উঠেছে! 
ভয়ে তার অন্তর 
আত্না শুকিয়ে কাঠ! 
একটি স্বপ্ন 
গড়তে কি লাগে বলুন 
তো পাঠক? 
একটি ভাববার মত মন,নিরলস 
প্রচেষ্টা, সুখী হবার 
আকাঙ্খা ইত্যাদি, 
ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক 
এবার যদি প্রশ্ন 
করি স্বপ্ন 
ভাঙতে কি লাগে? 
আপনি বলবেন এর 
উল্টো টা হলেই তো হয়। 
আপনার উত্তর 
হয়তো সঠিক! 
তাহলে আরও কিছু যোগ 
করে নিন,পৃথিবীতে সবাই 
স্বপ্ন দেখে। 
একটা রাস্তার 
ভিখেরীও স্বপ্ন 
দেখে ভালোভাবে বাঁচার। 
স্বপ্ন লালন 
করে ভীক্ষের চাল,ডাল 
যেন আকাড়া না হয়। 
সবাই স্বপ্ন 
দেখতে ভালবাসে। 
তারিক মাহমুদ ও স্বপ্ন 
দেখত।কিন্তু 
সে জেনেছিল, 
পৃথিবীতে মানুষের 
প্রতিটি স্বপ্নের 
পেছনে একটি করে "যদি" 
বা "কিন্তু"থাকে।কেউ 
সেটাকে ভাগ্য 
বলে আশ্রয় 
খোজে স্বার্থপর এ 
পৃথিবীতে। 
এখানে যে যতই 
মধুমাখা কথা বলুক 
না কেন 
দিনশেষে সে একা, ঠিক 
যেন পরপারের বিশাল 
দুনিয়ায় 
একা একা চোরাবালিতে সাঁতরানো। 
একজন মত্ত মাতালও 
সৃষ্টিকর্তাকে ভোলে না। 
যখন 
সে দেখে একটি খড়কুটোও 
নেই আকড়ে ধরার,তখন 
সে জগতের 
সৃষ্টিকারীকে শেষ 
ভরসায় আকড়ে ধরে। 
তারিক মাহমুদও স্বপ্ন 
দেখত,লোকের 
কাছে হাস্যকর সব 
স্বপ্ন। 
দরজা জানালাবিহীন 
ঘরে শুয়ে একটা ছোট্ট 
বাচ্চাছেলে আর 
কি বা করতে পারে? 
ছোট্টবেলায় মায়ের 
সাথে খড়ি(রান্না করার 
লাকড়ি) 
কুড়াতে গিয়ে একটি সুন্দর 
বাড়ী দেখেছিল। 
তার শিশুমন 
একনিঃশ্বাসে বলেছিল- 
-মা,মা আমাদের এমন 
বাড়ী নেই কেন? 
আমি একটা এমন 
বাড়ী বানাব। 
মা বলেছিল- 

খোকা,তাহলে স্কুলে যেতে হবে, 
পড়া করতে হবে,তুই 
পারবি? 
-মা, তুমি দেখ আমাদের 
এমন একটি বাড়ী হবে। 
মা ছেলেকে বুকে টেনে নেন। 
শুধু নিরবে অশ্রু 
বিসর্জন...... 
সেই থেকে তারিক 
মাহমুদ স্কুলে যায়। 
দুষ্টু ছেলেটি ফাকিও 
দেয়।শিশু মনে কতক্ষণ 
আর লালিত স্বপ্ন 
খেলা করে......... 
পেছনের বেঞ এ 
বসে থাকা,স্যারের 
নজরে না পড়া,খড়ের 
গাদায় বই- 
খাতা লুকিয়ে ধুলার 
সাগরে লুটোপুটি। 
নিয়মিতভাবে পেছনের 
বেঞের বালক সে। 
কেউ একটা ধমক 
দিলে চুপটি করে পেছনে গিয়ে বসত 
সে। 
মা ভীষন 
ভালবাসাতো আমাকে। 
বড়ভাই কাজ 
না করলে মার খেত,ছোট 
ছিলাম 
বলে বেঁচে যেতাম। 
আজ কেন 
জানি মনে হয়,মা একটু 
বকা দিক,একটি কাচা কুনচি দিয়ে পিঠে একটা বাড়ি দিয়ে দাগ 
বসিয়ে দিক,তারপর 
সে দাগে মায়ের 
হাতের মালিশের 
সাথে একটু চোখের জল 
জ্বালা ধরাক! 
কিন্তু মা এখন আর 
মারে না।শত 
ডাকাডাকিতে মা'য়ের 
ঘুম ভাঙ্গে না। 
মা তুমি কত ঘুমাও? 
তোমার না কত্ত কাজ! 
মানুষের জমিতে মরিচ 
তুলতে হবে,টাকা জমাবে তোমার 
খোকার নতুন 
জামা কিনতে হবে না? 
আমি কিন্তু এ 
পঁচা জামা গায়ে স্কুলে যাবো না। 
মা নির্বিকার.... 
ছেলেটি।তারিক 
মাহমুদ। 
এখন একলা ঘরে ঘুমায়। 
দরজা নেই, 
মা যাতে করে আসতে কষ্ট 
না পায়! 
সারাটি দিন 
তো একভাবে কাটে। 
কিন্তু রাত....... 
ছেলেটি কাত 
হয়ে শুয়ে থাকে। 
চোখে ঘুম নেই, মরার মত 
পড়ে থাকে। 
মা আসে, চুপিচুপি। 
পাছে তার খোকা এই 
জাগলো বুঝি! 
মিষ্টি একটা চুমু 
কপালে একে দিয়ে মা হারিয়ে যায় 
দুরদেশে।প্রতিদিন এমন 
স্বপ্নে চোখ 
বুজে পড়ে থাকে সে। 
মায়ের ভালো কোন 
কাপড় ছিলো না।শত 
শেলাই সেখানে হুল 
ফোটাত 
প্রতিটি বুননে। 
সেদিন কোন 
বৃষ্টি ছিলো না। 
না কোন ঝড় ও হয়নি। 
কোন কাকের দল 
গগনবিদারী চিৎকারে কাপিয়ে তোলে নি ঘুমিয়ে পড়া সমাজকে,প্রতিবেশ 
ী কে। 
এখানে কান্না করতে নেই,প্রতিবেশীর 
ঘুমে ব্যাঘাত ঘটবে যে! 
কান্নাখেকো হও। 
স্বপ্নের 
টুটি চেপে ধরো,দেখবে তুমি জগতের 
সববচেয়ে সুখী মানুষদের 
একজন। 
সেদিন অনেক লোকের 
জটলা আমাদের 
বাড়ীতে। 
উঠানভর্তি লোকের 
আনাগোনা। 
সুজন ভাই কাঁদে,শিপন 
ভাই ও।আমি হ্যাবলার মত 
ফ্যাল ফ্যাল করে সবার 
মুখের 
পানে চেয়ে থাকি। 
আজ 
আমি পুকুরে নেমে ইচ্ছে মত 
দাপাদাপি করি,কেউ 
কিছু বলে না। ভাতের 
পাতিলে বাসি ভাত 
খেতে হয়না,টক 
হওয়া ডাউল। 
বাহ ফাইন তো! 
উঠানভর্তি লোক। 
সবাই কাঁদে। 
মা কোথায়? 
মা রে তো দেখিনা! 
বারান্দায় 
সাদা চাদরে ঢাকা মায়ের 
শরীর। 
সবাই কান্না উৎসবের 
আয়োজনে ব্যস্ত! আজ 
কত বছর হয়ে গেল 
আমি একা। 
জীবনের গতিপথ 
ভারী অদ্ভুত! 
এখানে ক্ষণে ক্ষণে দৃশ্যপট 
পাল্টায়। 
আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল 
শরিফা ও নেই। 
ঈদের রঙিন পোশাক 
ওকে রক্ত 
রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে! 
আজ তো আমার সবকিছুই 
আছে তবু কিছুই নেই। 
এটাই বাস্তবতা! 
---------------------------- 
দরজায় কড়া নাড়ার 
শব্দ। 
সাথী আতঙ্কিত! 
তাড়াতাড়ি ডায়েরী টা বন্ধ 
করে ফেললো সে। 
ওপাশ থেকে শব্দ 
ভেসে আসছে....ক্লান্ত 
কন্ঠে কে যেন ডাকলো। 
-সাথী দরজা খোল। 
সাথীর দুচোখ 
বেয়ে অবিরত জলের 
ফোয়ারা নামছে। 
সামনে তারিক 
নিঃশ্চুপ দাড়িয়ে! 
তারিক শুধু বলেছিল, 
কতটুকু চিনলে আমায়! 
সাথী তারিককে জড়িয়ে ধরে শুধু 
কাঁদছিলো। 
ক্রমেই কান্নার 
আওয়াজ 
ভারী করে তুলছিল 
চারপাশ। 
ভাবী দৌড়ে ছুটে এলেন 
তারিকের ঘরে। 
-কি হয়েছে তারিক? 
সাথী কাঁদে কেন? 
মুহূর্তেই কচি লতার মত 
ঢলে পড়ল 
সাথী তারিকের বুকে! 
-ভাবী ধরো ধরো, 
এক্ষুনি হসপিটালে নিতে হবে। 
অজ্ঞান হয়ে গেছে। 
---------------------------- 
হসপিটালে সবাই 
চিন্তায় অস্থির। 
ভাবী তো বারবার 
পায়চারি করছিল। 
তারিক এককোনায় 
চুপচাপ বসে আছে। 
এমন সময় ডাক্তার 
বেরিয়ে আসলেন। 
-রোগীর গার্ডিয়ান 
কে? 
তারিক 
সামনে এগিয়ে এল 
-আমি। 
কি হয়েছে আমায় 
বলুন। 
-মিষ্টি আনুন। 
ওনি মা হতে চলেছেন। 
ভাবী এসেই 
তারিককে কান ধরে চোখ 
রাঙানি দিয়ে বলল, 
কি! 
আমাকে জানানো হয়নি? 
হু? 
-ভাবী ছাড়ো তো! 
সবাই দেখছে। 
সাথীর ভয় এখন 
ভালবাসায় 
রুপান্তরিত হয়েছে। 
মানুষটিকে ভালবাসতে শুরু 
করে দিয়েছে সে। 
-------------------- 
আজ দু বছর 
হতে চললো সাথীর 
সংসার জীবনের। 
আজ তাদের ঘরে নতুন 
অতিথি আসবে। 
তারিকের 
মুখটা ভয়ে নীল বর্ণ 
হয়ে গেছে। সে বারবার 
সাথীকে সাহস 
জোগাচ্ছে। 
সাথী স্বামীর মুখ 
পানে চেয়ে আছে..... 
-এই তুমি এত 
ভয় পাচ্ছো কেন? 
বেবী তো আমার হবে। 
তোমার ভয় কি? 
তারিক চোখ মুছলো। 
- তুমি বুঝবে না। 

আমি জানি তুমি আমাকে নিয়ে ভয় 
পাচ্ছো। 
তুমি দেখে নিও 
আমাদের সন্তানদের বড় 
না করে আমি মরবোই না। 
-একটাও তো হয়নি এখনও। 
এখনি এত পরিকল্পনা! 
- আপনি যেহতু আছেন 
মশাই, 
পরিকল্পনা তো করতেই 
হবে। বুঝলেন? 
---------------------------- 
আমাদের প্রথম 
সন্তানের নাম 
তাহমিনা তাবাসসুম 
তিন্নি। 
সবাই হসপিটালে এসেছে। 
সবাই উৎকন্ঠায় 
ছিলো...... 
ছোট্ট শিমু বলছে তার 
মা কে আম্মু 
তিন্নি আমার 
সাথে খেলবে না? 
-হুম।তিন্নি বড়। 
হয়ে তোমার 
সাথে খেলবে। 
--------------------- 
সাথীর বাবা- 
মা এসেছে। 
-আব্বু, আব্বু, এবার 
আমার মেয়ের 
সাথে তোমাকে বিয়ে দিয়ে মাকে মাঠের 
বাইরে পাঠিয়ে দিব। 
কেমন? 
মেয়ের 
ছেলেমানুষি এখনও গেল 
না। এ যেন আমার সেই 
ছোট্ট খুকী! 
যে কিনা কিছুক্ষণ 
আগে একটা ফুটফুটে নিষ্পাপ 
আরেকটা খুকীর জন্ম 
দিয়েছে। 
------------------------ 
আজকাল সাথী অতীতের 
স্মৃতিরোমন্থন 
করে সময় কাটায়। 
তারিকের 
লেখা বইগুলি পড়ে। আর 
সেই "মেমসাহেব" বইটি। 
যেদিন প্রথম পড়েছিল, 
সেদিন থেকেই 
তারিকের মেমসাহেব 
হয়ে উঠতে তার পথ। 
চলা শুরু..... 
মনে পড়ে প্রথমদিনের 
কথা। 
ভাবী বলেছিল... 
-তারিক কিন্তু আমার 
দেবর নয়, ও আমার ছোট্ট 
ভাই, আমার সন্তান। 
ওকে কষ্ট দিয়ো না। 
ওকে তুমি সুখী করো। 
সারাজীবন কষ্ট 
পেয়েছে। এখন 
তুমি এসেছ। 
তুমি ওকে আগলে রাখবে। 
দেখবে মাটির 
একটা পুতুল যেন।শুধু 
ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখো। 
বাসর রাতের 
কথাগুলি আজ 
মনে পড়ে..... 
-আপনি সুখী হোন। 
কি মিষ্টি সে শুভ 
কামনা! 
এক সময়কার 
মা হারানো তারিক 
একটু সুখ 
খুজে বেড়িয়েছে। 
আজ সে বড় লেখক। 
যাকে এক সময় শুনতে হত 
*এত খাচ্ছিস কেন? 
সৎ মা, যার 
খাওয়া দেখানোর জন্য 
পাড়ার 
লোককে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসত। 
আজ তার একটা বই বিক্রয় 
করলে লক্ষ টাকা। 
যাকে সারারাত 
না খেয়ে থাকলে 
থাকলে কেউ ডাকতো না। 
তারিক একদিন 
আমাকে একটি প্রশ্ন 
করেছিল। 
-আচ্ছা সাথী, তুমি ত 
মেয়ে কারও 
বাবা দ্বিতীয় 
বিয়ে করলে তাকে সন্তানদের 
সৎ মা বলা হয় কেন? 
কেন বলা হয় না অসৎ মা। 
সবাই কি সৎ হতে পারে? 
সেদিন সাথী কোন 
উত্তর দিতে পারেনি। 
আজ সে সব উত্তর জানে! 
তার (তারিকের) আজ কত 
শুভাকাঙ্খী! 
মাঝে মাঝে তারিক 
বলতো 
তুমি আমার সন্তানদের 
দেখে রেখ। 
আমি বলতাম, 
তুমি কি কোথাও যাচ্ছ 
নাকি আমাদের ফেলে। 
ও হাসত।নির্মল 
সে হাসি। কোথাও কোন 
কাঠিন্য নেই।অথচ 
তাকে যখন প্রথম 
ছবিতে দেখেছিলাম, 
ভীষন 
রাগি মনে হয়েছিল। 
আমি ভাবতাম, এই 
ছেলে আমার 
স্বামী হবে! 
অথচ মানুষটার ভেতর 
টা যে বুঝেছে, 
সে ছাড়তে চায়নি তারিকের 
সঙ্গ। 
তারিকের বন্ধু 
শিবলী প্রায়ই 
বলতো,ভাবী আমি ওকে সেই 
ছোটবেলা থেকে চিনি। 
ও বাইরে এক কিন্তু 
ভেতরের মানুষটার 
সন্ধান সবাই 
করতে পারে না। 
আজ সময় ভিন্ন।এখন 
ভাবতে গর্ব 
হয়,চোখে জল আসে। 
আজ আমার 
সন্তানেরা বড় 
হয়েছে। 
ওরা ওদের 
বাবাকে নিয়ে গর্ববোধ 
করে। 
তাহমিনার কাছে ওর 
বাবাই আইডল। 
আর সেই মানুষটি? 
তারিক মাহমুদ! 
কোথায় সে? 
কোথায় সেই ছেলেটি? 
যে ছাদের 
কোণে পায়চারি করতো। 
হাতে থাকতো একটা ডায়েরী আর 
কলম। 
সেই ছেলেটিই কি এই 
ছেলেটি নয়?! 
যাকে একসময় দেখতাম 
আমি। 
কোথায় সে? 
সে এখন ঘরের 
দেয়ালে একটি ফ্রেমে বন্দি। 
নিঃশ্চুপ এক 
পাহারাদার। 
সে এখন তার 
মেমসাহেবের 
থেকে অনেক দুরে। 
প্রতিদিনই 
তাহমিনা কাঁদে মায়ের 
লেখা বই পড়ে আর 
নিজের 
সামনে ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুর 
সে বিভীষিকা মনে করে। 
নিষ্ঠুর দানব 
এসে চাপা দিয়েছে ওর 
বাবার নরম হৃদয়টাকে। 
মা যে বাবাকে নিয়েই 
বইটি লিখেছে।তাই 
সে প্রতিদিন 
বাবাকে খোজে বইয়ের 
প্রতিটি পাতায়। 
একটি দুর্ঘটনা জীবনটাকে কত 
বদলে দেয়! 
উৎসর্গঃ কোন এক 
অচেনা তারিক মাহমুদ ও 
সাথীকে।